নড়াইল জেলার সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না।
এক ছাত্রের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে কলেজ শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে মঙ্গলবার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম ছায়েদুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ওই চিঠি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা হাতে পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
চিঠিতে কয়েকটি নির্দেশনা অনুসরণ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অনুরোধ করা হয়। নির্দেশনার মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলেজ ও মাদ্রাসার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল আনতে নিষেধ করা হয়; নির্দেশনাটি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের তৎপর থাকতে এবং প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের ব্যাগ পরীক্ষা করতে বলা হয়; কোনো শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল পাওয়া গেলে তা নিয়ে নেওয়াসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আনা নিষেধ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা গোপনে মোবাইল আনছে এবং ভালো-মন্দ বিবেচনা না করে বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত পোস্ট, লাইক এবং শেয়ার নিয়ে বিব্রতকর ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
মোবাইল ফোন ব্যবহার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে না আনার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আসন্ন ঈদের ছুটির পর নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করতে বলা হয়।
গত ১৭ জুন সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্র বিতর্কিত মন্তব্যকারী ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়। এতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তোলেন ওই কলেজের ছাত্র ও স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। একই ধর্মের হওয়ায় তাকে সাপোর্ট দিচ্ছে- এমন অভিযোগ তুলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এ সময় তাদের পাশে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত কলেজছাত্রের সঙ্গে আটক করা হয় অধ্যক্ষকে। ওই দিনই থানা হাজত থেকে অধ্যক্ষকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে মির্জাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মোরছালিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১৭০ থেকে ১৮০ জনকে আসামি করে নড়াইল থানায় মামলা করেন। মামলা করার পর সোমবার রাতে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিতে দলের নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সামনেই নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও ওই কলেজের এক ছাত্রের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের চৌধুরীকে। এ কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন-জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ছায়েদুর রহমান ও সদর থানার ওসি শেখ শওকত কবীর।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামকে আহবায়ক করে পুলিশ প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ডিআই ওয়ান মীর শরীফুল হক ও পুলিশ পরিদর্শক (অপরাধ) রফিকুল ইসলাম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।